মহান আল্লাহ তাআলা আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মতদের জন্য ইবাদতের বিশেষ কিছু সুবিধা প্রদান করেছেন। এর মধ্যে পাঁচটি রাত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ইবাদতের এই বিশেষ পাঁচটি রাত হলো: শবে জুমা বা জুমার রাত, শবে ঈদাইন বা দুই ঈদের রাত্রিদ্বয়, শবে বরাত বা মুক্তির রাত তথা নিসফ শাবান বা শাবান মাসের মধ্য রাত, শবে কদর বা কদরের রাত অর্থাৎ মর্যাদাপূর্ণ রজনী।
শবে বরাতের নফল নামাজ ও ইবাদত
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন শাবানের মধ্য দিবস আসবে, তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদত করবে ও দিনে রোজা পালন করবে। (ইবনে মাজাহ)। ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো নামাজ। সুতরাং নফল ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো নফল নামাজ। প্রতিটি নফল ইবাদতের জন্য তাজা অজু বা নতুন অজু করা মোস্তাহাব। রাতের নিয়মিত নফল ইবাদতের মধ্যে রয়েছে; বাদ মাগরিব ছয় থেকে বিশ রাকাত আউওয়াবিন নামাজ। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত: যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাজের পর ছয় রাকাত নামাজ আদায় করবে; এসবের মাঝে কোনো মন্দ কথা না বলে, তার এই নামাজ ১২ বছরের ইবাদতের সমতুল্য গণ্য হবে। হজরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত: যে ব্যক্তি মাগরিবের পর বিশ রাকাত নামাজ আদায় করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করবেন। (তিরমিজি, মিশকাত, ফয়জুল কালাম, হাদিস: ৪৪৯-৪৫০)। রাতের শ্রেষ্ঠতম ইবাদত হলো তাহাজ্জুদ নামাজ। (আল কোরআনুল করিম, পারা: ১৫, সুরা-১৭ ইসরা-বনি ইসরাইল, আয়াত: ৭৯)। এ ছাড়া সালাতুস তাসবিহ এবং অন্যান্য নফল নামাজ আদায় করা যায়। রজব শাবান মাসের রাতের নফল নামাজ তারাবিহ নামাজ বা কিয়ামুল লাইলের প্রস্তুতি।
তাৎপর্য:
এই রাত্রি সম্পর্কে হযরত মোহাম্মদ (সা:) বলেন, এই রাত্রিতে এবাদত-কারিদের গুনাহরাশি আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করে দেন। তবে কেবল আল্লাহর সাথে শিরককারী, সুদখোর,গণক, যাদুকর, কৃপণ, শরাবী, যিনাকারী এবং পিতা-মাতাকে কষ্টদানকারীকে আল্লাহ মাফ করবেন না।
অন্য এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে হুজুর (সা:) বলেছেন, “জিব্রাইল (আ:) আমাকে বলেছেন, আপনি আপনার উম্মতদের জানাইয়া দেন যে, তারা যেন শবে বরাতের রাতকে জিবীত রাখে।” অর্থাত্, সারারাত তারা যেন ইবাদতের মাঝে কাটাইয়া দেয়।
আরেকটি হাদীসে রাসূল (সা:) বলেছেন,এই রাত্রে আসমান থেকে ৭০ লক্ষ ফেরেশতা যমীনে আসিয়া ঘুরিয়া ফিরিয়া এবাদতকারী-দিগকে পরিদর্শন করেন এবং তাদের এবাতদ সমূহ দেখতে থাকেন।
অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যাক্তি সাবান চাঁদের পঁনের তারিখে রাতে এবাদত করবে এবং দিনে রোজা রাখবে, দোজখের আগুন তাকে স্পর্শ করতে পারবে না।
আরো এক হাদিসে রাসূল (সা:) বলেছেন, তোমরা শবে বরাতকে সম্মানিত মনে কর। এটা শাবান চাঁদের পঁনের তারিখের রাত্রি। এই রাত্রে যারা এবাদতে মগ্ন থাকে তাদের প্রতি আল্লাহ পাকের রহমতের ফেরেশাতাগণ আবতীর্ণ হয়। আর আল্লাহ তাদের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন।
এক হাদীসে এসেছে নবী কারীম (সা:) বলেছেন, এই রাতে আল্লাহ তা’আলা মোমিন মুসলমাদিগকে ডাকিয়া বলেন, আজ আমার যে বান্দা মার্জনা কামনা করবে, আমি তাকে মার্জনা করে দেব। যে বান্দা সাস্থ্য কামনা করবে, তাকে সাস্থ্য দান করব। যে বান্দা ধনৈশ্ব্-র্যের কামনা করবে, তাকে ঐশ্বর্যশালী করে দিব।
মধ্য শাবানের নফল রোজা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন শাবানের মধ্য দিবস আসে, তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদত কর ও দিনে রোজা পালন কর। (সুনানে ইবনে মাজাহ)। এ ছাড়া প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ আইয়ামে বিজের নফল রোজা তো রয়েছেই, যা আদি পিতা হজরত আদম (আ.) পালন করেছিলেন এবং আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদও (সা.) পালন করতেন, যা মূলত সুন্নত। সুতরাং তিনটি রোজা রাখলেও শবে বরাতের রোজা এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। তা ছাড়া, মাসের প্রথম তারিখ, মধ্য তারিখ ও শেষ তারিখ নফল রোজা গুরুত্বপূর্ণ; শবে কদরের রোজা এর আওতায়ও পড়ে। সওমে দাউদি বা হজরত দাউদ (আ.)-এর পদ্ধতিতে এক দিন পর এক দিন রোজা পালন করলেও সর্বোপরি প্রতিটি বিজোড় তারিখ রোজা হয়; এবং শবে কদরের রোজার শামিল হয়ে যায়। সর্বোপরি রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসের পর রজব ও শাবান মাসে বেশি নফল ইবাদত তথা নফল নামাজ ও নফল রোজা পালন করতেন; শাবান মাসে কখনো ১০টি নফল রোজা, কখনো ২০টি নফল রোজা, কখনো আরও বেশি রাখতেন। রজব ও শাবান মাসের নফল রোজা রমজান মাসের রোজার প্রস্তুতি।
একটি রোজার মাসআলা
হাদিস শরিফে আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনা শরিফে হিজরতের পরে দেখতে পেলেন মদিনার ইহুদিরাও আশুরার একটি রোজা পালন করেন। তখন তিনি সাহাবিদের বললেন, আগামী বছর থেকে আমরা আশুরার আগে বা পরে আরও একটি রোজা রাখব, ইনশা আল্লাহ! যাতে তাদের সঙ্গে মিল না হয়। তাই আশুরার রোজা অর্থাৎ মহররম মাসের দশম তারিখের রোজার সঙ্গে তার আগে বা পরে আরও একটি রোজা রাখা মোস্তাহাব। শবে বরাতসহ বছরের অন্য নফল রোজাগুলো একটি রাখতে বাধা নেই; বরং এক দিন পর এক দিন রোজা রাখা হজরত দাউদ (আ.)-এর সুন্নত বা তরিকা; যা নফল রোজার ক্ষেত্রে উত্তম বলে বিবেচিত এবং সওমে দাউদি নামে পরিচিত। অনুরূপভাবে শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজাও আলাদা আলাদা বা একত্রেও রাখা যায়।
শবে বরাত ও হালুয়া-রুটি
শবে বরাতের সঙ্গে হালুয়া-রুটির একটি সম্পর্ক পরিলক্ষিত হয়। হালুয়া আরবি শব্দ। অর্থ হলো মিষ্টি বা মিষ্টান্ন। রাসুলুল্লাহ (সা.) মিষ্টি পছন্দ করতেন এ কথা সুবিদিত; তিনি গোশতও পছন্দ করতেন তাও অবিদিত নয়। যা-ই হোক শবে বরাত হলো ইবাদতের রাত। দান-খয়রাত করা ও মানুষকে খাওয়ানো এক প্রকার ইবাদত। তবে এই দিন ও রাতকে হালুয়া-রুটিতে পরিণত করে ইবাদত থেকে গাফেল হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তেমনি হালুয়া-রুটির ওপর ফতোয়া প্রদান করাও উচিত নয়।
যাদের গুনাহ ক্ষমা হবে না
হাদিস শরিফে আছে, শবে বরাতে আল্লাহ তাআলা সবাইকে মাফ করবেন, তবে শিরককারী (অংশীবাদী) ও আত্মীয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নকারীকে ক্ষমা করবেন না। অন্য বর্ণনায় এসেছে, শবে বরাতে আল্লাহ তাআলা সবাইকে মাফ করবেন। তবে শিরককারী (অংশীবাদী) ও হিংসাকারীকে ক্ষমা করবেন না। অহংকার পরিত্যাগ করুন; অহংকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। (বায়হাকি, শুআবুল ইমান)।
গুনাহ মাফ পাওয়ার সহজ পথ
বান্দার হক বা সৃষ্টির পাওনা পরিশোধ করে দিন; আত্মীয়স্বজনের হক আদায় করুন; মহান প্রভু আপনাকে ক্ষমা করে দেবেন। পিতা-মাতার হক আদায় করুন; আল্লাহ আপনার প্রতি করুণা করবেন। সৃষ্টির প্রতি দয়াশীল হোন; আল্লাহ আপনার প্রতি দয়ালু হবেন। আপনি সবাইকে ক্ষমা করে দিন; নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করে দেবেন। খাঁটি তওবা করুন; তওবাকারীকে আল্লাহ ভালোবাসেন। বেশি বেশি ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করুন; আল্লাহ ইস্তিগফারকারীকে পছন্দ করেন। (বুখারি ও মুসলিম)।
শবে বরাতের নামাযঃ-
শবে বরাতের রাতে এশার নামাযের পর থেকে সুবেহ্ সাদিক অর্থাৎ ফজর পর্যন্ত নফল নামায ও বিভিন্ন এবাদত পবিত্র কুরআন পাঠ, যিকির-আযকার, তসবিহ-তাহলীল করা যায়। এই রাতে কমপক্ষে ২ রাকাত করে ১২ রাকাত নফল নামায ও ৪ রাকাত ছালাতুত্ তাছবীহ্ নামায পড়া অতি উত্তম।
নামাযের নিয়ত আরবীতে:
“নাওয়াইতুআন্ উছল্লিয়া লিল্লা-হি তা‘আ-লা- রাক‘আতাই ছালা-তি লাইলাতিল বারা-তিন্ -নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল্ কা‘বাতিশ্ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার”।
বাংলায় নিয়ত:- “ আমি ক্বেবলামূখী হয়ে আল্লাহ্ এর উদ্দেশ্যে শবে বরাতের দু‘রাক‘আত নফল নামায আদায়ের নিয়ত করলাম- আল্লাহু আকবার”।
শবে বরাতের নামায দু‘রাকাত করে যত বেশী পড়া যায় তত বেশী ছওয়াব। নামাযের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাছ, সূরা ক্বদর, আয়াতুল কুরছী বা সূরা তাকাছুর ইত্যাদি মিলিয়ে পড়া অধিক ছওয়াবের কাজ।
dhonnobad
ReplyDeleteMasa -allah
ReplyDeleteঅনেক চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
ReplyDeleteখুবই সুন্দর। আল্লাহ্ আপনার নেক হায়াত দান করুন।
ReplyDeleteAamin
Deletealhamdulillah.
ReplyDeleteAlhamdullah 💓
ReplyDeleteআলহামদুলিল্লা।
ReplyDeleteজাযাকাল্লাহ ভাই
ReplyDeleteমাশাআল্লাহ।
ReplyDeleteজাযাকাল্লাহ
ReplyDeleteজাযাকুমুল্লাহ
ReplyDeleteখুবই উপকৃত হলাম
ReplyDeleteআমিন
ReplyDeleteখুবই উপকৃত হলাম https://www.islamicplpfile.com/2023/03/2023.html
ReplyDelete