Pages

যে সম্পদের যাকাত দিতে হবে



যাকাত শব্দের অর্থ হচ্ছে বৃদ্ধি পাওয়া; বেশি হওয়া। ইহা হচ্ছে বিশেষ সম্পদে নির্ধারিত ব্যক্তিদের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করা ফরজ। যাকাত আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে নিসাব পরিমান সম্পদের মালিক বান্দার উপর ফরজ করা হয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, “তাদের মালামাল থেকে যাকাত গ্রহণ করুন যাতে তার মাধ্যমে তাদেরকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন করতে পারেন। আর তাদের জন্য দোয়া করুন; নি:সন্দেহে আপনার দোয়া তাদের জন্য স্বান্ত্বনাস্বরূপ। বস্তুত : আল্লাহ সবকিছু শোনেন, জানেন। (সূরা তাওবাহ : আয়াত ১০৩); তাহলে কোন কোন জিনিসের যাকাত দিতে হয় এবং কি পরিমাণ সম্পদ হলে যাকাত দিতে হয়; তা জানা মুসলমান মাত্রই অত্যন্ত আবশ্যক।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যে যাকাত বিধিবিধান করেছেন তা তিন ধরণের-
প্রথম- সম্পদের যাকাত :
১. স্বর্ণ ও রূপা এবং সকল মুদ্রা;
২. ‘বাহিমাতুল আনআ’ম তথা উট, গরু, দুম্বা-ভেড়া ও ছাগল; যেগুলো মুক্তভাবে বিচরণকারী।
৩. জমিন থেকে যা বের হয়; যেমন- শস্যদানা, ফল-ফলাদি ও খনিজপদার্থ।
৪. ব্যবসা সামগ্রী;
দ্বিতীয়- ব্যক্তি দায়িত্বের ফরজ যাকাত। যা প্রতিটি মুসলিমের প্রতি রমজান মাসের শেষে ঈদের নামাজের পূর্বে আদায় করা ফরজ হয়। অর্থাৎ সাদাকাতুল ফিতর।
তৃতীয়- উত্তম দান খয়রাত। যা মুসলিম ব্যক্তি আল্লাহর নিকট বেশি ছাওয়াবের আশায় অন্যের প্রতি ইহসান করে থাকে।

১. স্বর্ণ ও রূপার যাকাত হচ্ছে আড়াই ভাগ (২.৫০%)

স্বর্ণের পরিমাণ : স্বর্ণ বিশ দিনার* ও এর অতিরিক্ত হলে শতকরা আড়াই ভাগ (২.৫০%) যাকাত ফরজ হবে। ২০ দিনার সমান হবে ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ। যা ভরির হিসাবে সাড়ে সাত তোলা বা ভরি।

রূপার পরিমাণ :
রূপা দুই শত ও এর অধিক সংখ্যা দিরহাম হলে বা ওজনে পাঁচ আওয়াক ও এর বেশি হলে শতকরা আড়াই ভাগ (২.৫০) যাকাত ফরজ হয়। এই হিসাবে দুই শত দিরহাম সমান ৫৯৫ গ্রাম হয়। যা ভরি/তোলার হিসাবে সাড়ে ৫২ তোলা রূপা হয়।
মনে রাখতে হবে- জাকাতে দেয়ার নিসাব বা পরিমাণ মিলানোর জন্য স্বর্ণ ও রূপা এক সাথে মিলানো যাবে না। আলাদা আলাদা হিসাবে হতে হবে।
*দিনার : এক দিনার (স্বর্ণমদ্রা) সমান হচ্ছে এক মিছকাল। আর এক মিছকাল বর্তমান যুগের হিসাবে ৪.২৫ গ্রাম।

মুদ্রাসমূহের যাকাত-
বর্তমান যুগের মুদ্রাসমূহ যেমন- রিয়াল, ডলার, টাকা ইত্যাদির বিধান স্বর্ণ-রূপার বিধানের মতোই। কিমাত তথা বর্তমান মূল্যের ভিত্তিতে নির্ধারণ করতে হবে।মুদ্রা পরিমাণ যখন স্বর্ণের বা রূপার মূল্যের সম পরিমান নেসাবে পৌঁছবে তখন তাতে যাকাত ফরজ হবে। আর যাকাত আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে ২.৫০% ভাগ যখন পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হবে।

মুদ্রার যাকাত বের করার পদ্ধতি :
যেমন ধরা যাক- বর্তমান বাজারে এক ভরি স্বর্ণের দাম ৫০,০০০/- পঞ্চাশ হাজার টাকা তাহলে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণের দাম হবে ৩,৭৫,০০০/- তিন লাখ পঁচাত্তর হাজার টাকা। যার নিকট সর্ব নিম্ন এই টাকা থাকবে, তাকে ২.৫০% আড়াই ভাগ যাকাত আদায় করতে হবে। অর্থাৎ তাকে ৯,৩৭৫/- নয় হাজার তিন শত পঁচাত্তর টাকা যাকাত দিতে হবে।
অথবা

সমস্ত সম্পদকে ৪০ দ্বারা ভাগ করলে দশ ভাগের এক চতুর্থাংশ দাঁড়াবে। আর ইহাই স্বর্ণ-রূপার ও এর হুকুমে যা আসে তার যাকাত। মনে করুন এক জনের নিকট টাকা আছে ৩,৭৫,০০০/- তিন লাখ পঁচাত্তর হাজার টাকা (৩,৭৫,০০০/৪০=৯৩৭৫/-) ইহা হচ্ছে তার ঐ তিন লাখ পঁচাত্তর হাজার টাকার যাকাত। আর ইহা দশ ভাগের এক চতুর্থাংশ।

২. ‘বাহিমাতুল আনআ’ম তথা উট, গরু, দুম্বা-ভেড়া ও ছাগল-এর জাতাতের দু’টি অবস্থা :
ক. যখন এ পশুগুলো একটি পূর্ণ বছর বা অধিকাংশ সময় বৈধ মরুভূমি বা খোলা মাঠে কিংবা চারণভূমিতে মুক্তভাবে বিচরণ করবে। বছর পূর্ণ হওয়ার পাশাপাশি নির্ধারিত নিসাবে বা পরিমাণে পৌঁছবে তখন তাতে যাকাত ফরজ হবে। চাই তা দুধের জন্য বা বাচ্চা নেয়ার জন্য বা মোটা-তাজা করার জন্য হোক। প্রতিটি পশুর যে জাতি রয়েছে যাকাত তার জাতি দ্বারাই আদায় করতে হবে। যাকাত দেয়ার সময় সর্বোত্তম বা সর্বনিম্ন মানের পশুটি নেয়া যাবে না। বরং মধ্যমটি গ্রহণ করতে হবে।
খ. যখন এ পশুগুলোর খাদ্য নিজের বাগান থেকে বা ক্রয় করে ব্যবস্থা করা হবে। যদি এগুলো ব্যবসার নিয়্যতে ক্রয় করে আর তার উপর এক বছর অতিবাহিত হয় তবে বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করে ২.৫০% (আড়াই ভাগ) যাকাত দিতে হবে।
আর যদি ব্যবসার জন্য না হয়; বরং দুধ বা বাচ্চা দেয়ার জন্য হয় এবং পশু খাদ্যের ব্যবস্থা মালিককে করতে হয় তবে এতে কোনো যাকাত নেই।

পশুরু নিসাব
১. মেষ (দুম্বা-ভেড়া) ও ছাগলের সর্বনিম্ন নিসাব হচ্ছে ৪০ টি (চল্লিশটি); এ পশুগুলো ৪০ থেকে ১২০ পর্যন্ত জাকাতের পরমাণ একটি মেষ বা ছাগল; ১২১ থেকে ২০০টির জন্য দু’টি মেষ বা ছাগল; ২০১ থেকে ৩৯৯ পর্যন্ত তিনটি মেষ বা ছাগল। এরপর প্রতি শ’তে একটি করে চলতে থাকবে।
২. গরুর সর্বনিম্ন নিসাব হচ্ছে ৩০ টি (ত্রিশটি); গরু ৩০-৩৯ হলে এক বছরের একটি বেটা বা বেটি বাছুর; ৪০-৫৯ হলে দু’বছরের একটি বেটি বাছুর; ৬০-৬৯ হলে দু’টি এক বছরের বেটা বা বেটি বাছুর; ৭০-৭৯ হলে দু’বছরের একটি বেটি বাছুর ও এক বছরের একটি বেটা বাছুর যাকাত দিতে হবে। এরপর প্রতি ৩০টিতে একটি বেটা বা বেটি বাছুর; এবং প্রতি ৪০টিতে দু’বছরের একটি বেটি বাছুর। ৫০টি গরুতে দু’বছরের একটি বেটি বাছুর; ৭০ গরুতে একটি এক বছরের বেটা বা বেটি বাছুর ও দুই বছরের একটি বেটি বাছুর এবং ১০০ টি গরুতে দুইটি এক বছরের বেটা বা বেটি বাছুর ও একটি দু’বছরের বেটি বাছুর। আর ১২০টি গরুতে চারটি এক বছরের বেটি বাছুর অথবা তিনটি দু’বছরের বেটি বাছুর। গরুর জাকাতের হিসাব এভাবেই চলতে থাকবে।

৩. উটের সর্বনিম্ন নিসাহ হচ্ছে সর্বনিম্ন ৫টি-
৫টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ১টি ছাগল
১০টা থেকে ১৪ পর্যন্ত ২টি ছাগল
১৫ থেকে ১৯ পর্যন্ত ৩টি ছাগল
২০ থেকে ২৪ পর্যন্ত ৪টি ছাগল
২৫ থেকে ৩৫ পর্যন্ত এক বছরের (বিনতে মাখাজ) একটি উষ্ট্রী
৩৬ থেকে ৪৫ পর্যন্ত দু’বছরের একটি উষ্ট্রী (বিনতে লাবূন)
৪৬ থেকে ৬০ পর্যন্ত (হিক্কাহ) তিন বছরের একটি উষ্ট্রী
৬১ থেকে ৭৫ পর্যন্ত (জিয্আ) চার বছরের উষ্ট্রী
৭৬ থেকে ৯০ পর্যন্ত ২টি বিনতে লাবূন (দু’বছরের দু’টি উষ্ট্রী)
৯১ থেকে ১২০ পর্যন্ত ২টি হিক্কাহ (তিন বছরের ২টি উষ্ট্রী)
(যেহেতু আমাদের দেশে এত সংখ্যক উট হয় না বিধায় উটের যাকাত নিসাব এটুকুই রাখছি)

৩. জমিন থেকে যা বের হয়; যেমন- শস্যদানা, ফল-ফলাদি ও খনিজপদার্থ।
শস্যদানা ও ফলাদির যাকাত ফরজের শর্তসমূহ-
যাকাত ফরজ হওয়ার সময় মালিকানাভুক্ত হতে হবে। অনুরুপ নিসাব পরিমাণ হতে হবে।
নিসাব হচ্ছে ৫ ‘ওয়াসাক’ এক ওয়াসাক সমান ৬০ সা’আ। তাহলে ৫ * ৬০= ৩০০ সা’আ।
এক সা’আ উত্তম গমের মাপ হয় প্রায় ২.৪০ কেজি। তাহলে ৩০০ * ২.৪০=৬১২ কেজি নিসাব।

একই প্রকারে ফল-ফলাদি হলে যেমন খেজুর এক বছরের সমস্ত ফল নিসাব পূরণের জন্য একত্র করতে হবে।

হাদিসে এসেছে-
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পাঁচ আওয়াকের কমে যাকাত নেই। পাঁচটি উটের কমে যাকাত নেই। পাঁচ ওয়াসাকের কমে যাকাত ফরজ নেই।’ (বুখারি ও মুসলিম)।

১. উশর একদশমাংশ (১০% ) : ইহা বিনা খরচে উৎাদিত হলে যেমন : বৃষ্টির পানি বা ঝর্ণার পানি দ্বারা।

২. অর্ধেক উশর একবিশমাংশ (৫%) : ইহা সেচ দ্বারা উৎপাদিত হলে। যেমন- কুপের বা গভীর নলকূপ কিংবা পুকুর বা নদীর পানি মেশিন ইত্যাদি দ্বারা সেচ দিয়ে উৎপাদিত ফসল বা ফল।

হাদিসে এসেছে-
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যা বৃষ্টি ও ঝর্ণার পানি দ্বারা সেচ হয় বা বৃষ্টির পানিতে সিক্ত শষ্যক্ষেত্র তার যাকাত একদশমাংশ (১০%) ; আর যা সেচ দ্বারা পানি দেয়া হয় তার যাকাত একবিশমাংশ (৫%)। (বুখারি)

৩. তিনদশমাংশ (৭.৫০%) : ইহা সেচ ও বৃষ্টি উভয় পানি দ্বারা হলে। অর্থাৎ একবার সেচেরে পানি দ্বারা আর একবার বৃষ্টির পানি দ্বারা হলে তিনদশমাংশ হারে যাকাত দিতে হবে।

যাকাত ফরজের সময় :
-- শস্যদানা ও ফল-ফলাদির দানা যখন শক্ত হবে ও ফল পেকে যাবে তখন যাকাত ফরজ হবে। ফল পাকা মানে হলো- যখন লাল বা হলুদ হয় যায়। সুতরাং বিক্রেতা যদি এর পরে বিক্রি করে তাহলে যাকাত বিক্রেতার উপর ফরজ; ক্রেতার উপর নয়।
-- যদি মালিকের অবহেলা ও ত্রুটি ছাড়াই ফসল নষ্ট হয়ে যায় তবে তার ফরজ যাকাত বাদ হয়ে যাবে।
-- সকল প্রকার সবজি অর্থাৎ যে সকল সবজি ফল-ফলাদি গুদামজাত করা যায় না তার উপর কোনো যাকাত নাই। কিন্তু যদি উহা ব্যবসা সামগ্রী হয়ি এবং তার বিক্রি মূল্যে বছর অতিক্রম ও নিসবা পরিমাণ হয় তবে (২.৫০%) শতকরা আড়াই ভাগ ফরজ যাকাত আদয় করতে হবে।

৪. ব্যবসা সামগ্রী :
কেনা-বেচার জন্য প্রস্তুতকৃত সামগ্রীকে “উরুযুত্তিজারা” বলা হয়। যেমন- স্থাবর সম্পত্তি, পশু, খাদ্য, পানীয় ও মেশিনপত্র ইত্যাদি।
ব্যবসা সামগ্রীর জাকাতের বিধান-

ব্যবসা সামগ্রী যখন নিসাবে পৌঁছবে ও তার প্রতি এক বছর অতিক্রম হবে তখন তার উপর যাকাত ফরজ হবে। বছর পূর্ণ হলে স্বর্ণের বা রূপার যে নিসাব জাকাতের হকদারদের জন্য বেশি উপকারী সে হিসাবে সমস্ত বিক্রয় মূল্য অথবা ব্যবসা সামগ্রী থেকে ২.৫০% আড়াই ভাগ যাকাত নির্ধারণ করতে হবে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে উপরোক্ত নিয়মে যাকাত দেয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।

মাহে রমজানে রোজার ফজিলত

মাহে রমজান অফুরন্ত রহমত, বরকত, মাগফিরাত, নাজাত ও ফজিলত পূর্ণ মাস। পবিত্র এই রমজান মাসের রোজার ফজিলত বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। নবী করিম (সা) মাহে রমজানের রোজার ফজিলত বণর্না করে বলেছেন -’যারা নিজ পরিবারবর্গ সহ সন্তুষ্টি সহকারে রমজানের ৩০ টি রোজা রেখেছে, হালাল বস্তু দ্বারা ইফতার করেছে আল্লাহ তাআলা তাদের ওই প্রকার পুণ্যদান করবেন, যেন তারা মক্কা ও মদিনা শরীফে রোজা রেখেছে।’
আল্লাহপাক হজরত মুসা (আ) কে একদা বলেছিলেন, হে মুসা! যে ব্যক্তি এই রমজান মাসে রোজা রাখবে আমি তার আমল নামায় মানুষ, জ্বিন,পরী ও সব জীব জন্তুর পূণ্যের সওয়াব লিখে দেব। মহানবী (সা) বলেছেন ,’যে ব্যক্তি এই মাসে একজন রোজাদার কে ইফতার করাবে তার (সগীরা) গুনাহ সমূহ মাফ হয়ে যাবে এবং দোজখের আগুন থেকে সে মক্তি পাব এবং সে সেই রোজাদারের সম পরিমান সওয়াব পাবে, অথচ তার রোজাদারের সওয়াবের কমতি হবে না।’
রাসুলুল্লাহ (সা) একদা শাবান মাসের শেষ দিনে সাহাবায়ে কেরামকে লক্ষ্য করে মাহে রমজানরে ফজিলত সম্পর্কে বলেছিলেন-’হে মানব গন! তোমাদের প্রতি একটি মহান মোবারক মাস ছায়া ফেলেছে। এই মাসে সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম একটি রজনী আছে। যে ব্যক্তি এই মাসে নেক আমাল দ্বারা আল্লাহ পাকের সান্নিধ্য লাভের কামনা করে,সে যেন অন্য সময়ে কোন ফরজ আদায় করার ন্যায় কাজ করল। আর এই মাসে যে ব্যক্তি কোন ফরজ কাজ আদায় করে,অন্য সময়ে ৭০ টি ফরজ আদায়ের নেকি লাভ করার সমতুল্য কাজ করল। এটি সংযমের মাস, আর সংযমের ফল হচ্ছে জান্নাত।’
রাসুলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন, রমজানরে প্রথম রাত্রি থেকে শয়তান গুলোকে বন্দি করা হয় এবং অবাধ্য জ্বীন গুলাকে আবদ্ধ রাখা হয়। জাহান্নামের দরজা গুলো বন্ধ রাখা হয়, সারা রমজান মাসে তা আর খোলা হয় না। আর জান্নাতের দরজা সমূহ খুরে দেওয়া হয়, সারা রমজান মাসে তা বন্ধ করা হয় না। হাদিস শরীফে বণির্ত আছে যে, নবী করিম(সা)ফরমান,’যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখে এবং এর রাত্রি গুলাতে ঈমান ও ইহতিসাবের সঙ্গে ইবাদত বন্দেগী করে, সে মায়ের গর্ভ থেকে সদ্য ভূমিষ্ট সন্তানের ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে যাবে।’
হাদিস শরীফে আরও উল্লেখ আছে যে রমজান মাস রহমত বরকত,গুনাহ মাফ ও দোয়া কবুলের মাস। এই পবিত্র মাসে ফেরেশতা মন্ডলী মানষের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন বলেন, ‘হে কল্যান কামনাকারী! আল্লাহ তাআলার কথা স্মরন করো,তার ইবাদত বন্দেগীতে রত হও এবং একনিষ্ঠ মনে তওবা কর । তোমরা এই মাসে যা কামনা করবে ও প্রার্থনা করবে,আল্লাহ তাআরা তা কবুল করবেন।’
মাহে রমজানরে একটি বিশেষ ফজিলত বা মাহাত্ম হচ্ছে,এই পবিত্র রমজান মাসে আল কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। রমজান মাসের রোজা মানুষকে পাপ-পংকিলতা থেকে মুক্তি দেয়,মানুষের কুপ্রবৃত্তি ধুয়ে মছে দেয় এবং আত্নাকে দহন করে ঈমানের শাখা প্রশাখা সন্জীবীত করে। সর্বোপরি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। এই মর্মে মহানবী (সা) ইরশাদ করেছেন,’রোজাদারের জন্য দুটি খুশি একটি হলো তার ইফতারের সময়, আর অপরটি হলো আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।(বুখারী ও মুসলিম)
নবী (সা) আরো বলেছেন- রোজাদারের মুখের ঘ্রান আল্লাহর নিকট মেশকেআম্বরের ঘ্রান অপেক্ষা অধিক তর পছন্দনীয়। এমনিভাবে পবিত্র কোর আন মাজিদে ও হাদিস শরীফে মাহে রমজানের রোজার বহুবিধ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। বস্তুত,রোজা উম্মতে মোহাম্মাদীর জন্য বরকত ও রহমত স্বরূপ। এর মধ্যে আল্লাহ তাআলার নেয়ামত, বরকত তথা মানুষের জন্য মুক্তি,শান্তি ও মঙ্গল নিহিত রয়েছে। তাই পবিত্র কোরাআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনে ঘোষনা করেছেন,তোমাদের মধ্যে যে কেউ রমজান মাসে উপস্থিত(জীবিত)থাকে,তারই রোজা পালন করা কর্তব্য।(সুরা আল বাকারা আয়াত-১৮৫)
পরম করুনা ময় অতি দয়ালু আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যেন আমাদের সবাইকে মাহে রমজানের রোজার ফজিলত,তার অপার করুনা ও রহমত সম্পর্কে উপলব্ধি করার,সঠিক ভাবে রোজা পালনের তৌফিক দিন।  ( আমিন)

রমজান মাস সম্পর্কিত কিছু হাদিসঃ

হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
আল্লাহ তাআলার কসম! মুসলমানদের জন্য রমযানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমযান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনগণ এ মাসে (গোটা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গনীমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস ৮৩৬৮, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদীস-৮৯৬৮, সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস-১৮৮৪, তাবারানী হাদীস-৯০০৪, বাইহাকী শুয়াবুল ঈমান, হাদীস-৩৩৩৫

হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
إذا جاء رمضان فتحت أبواب الجنة، وغلقت أبواب النار، وصفدت الشياطين.
যখন রমযান মাসের আগমন ঘটে, তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।-সহীহ বুখারী, হাদীস-১৮৯৮, সহীহ মুসলিম, হাদীস-১০৭৯ (১), মুসনাদে আহমদ হাদীস-৮৬৮৪, সুনানে দারেমী, হাদীস-১৭৭৫


হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘রোযা এবং কুরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোযা বলবে, আমি তাকে দিনের বেলায় পানাহার ও প্রবৃত্তির চাহিদা মেটানো থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং আমার সুপারিশ কবুল করুন। তখন দু’জনের সুপারিশই গ্রহণ করা হবে।-মুসনাদে আহমদ হাদীস : ৬৫৮৯; তবারানী, মাজমাউয যাওয়াইদ ৩/৪১৯


হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন,
من افطر يوما من رمضان متعمدا من غير سفر ولا مرض لم يقضه ابدا، وان صام الدهر كله، … وقد ذكره البخاري تعليقا بصيغة الجزم حيث قال : وبه قال ابن مسعود، وقال الشيخ محمد عوامه : وهذا الحديث موقوف لفظا ومرفوع حكما
যে ব্যক্তি অসুস্থতা ও সফর ব্যতীত ইচ্ছাকৃতভাবে রমযানের একটি রোযাও ভঙ্গ করে, সে আজীবন রোযা রাখলেও ঐ রোযার হক আদায় হবে না।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৯৮৯৩; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস : ৭৪৭৬; সহীহ বুখারী ৪/১৬০
হযরত আলী রা. বলেন-
من افطر يوما من رضمان متعمدا لم يقضه أبدا طول الدهر.
যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে রমযান মাসের একটি রোযা ভঙ্গ করবে, সে আজীবন সেই রোযার (ক্ষতিপূরণ) আদায় করতে পারবে না।- মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৯৮৭৮

রোযার হালতে গীবত করলে, গালি-গালাজ করলে, টিভি-সিনেমা ইত্যাদি দেখলে, গান-বাদ্য শ্রবণ করলে এবং যে কোনো বড় ধরনের গুনাহে লিপ্ত হলে রোযা মাকরূহ হয়ে যায়। আর এ কাজগুলো যে সর্বাবস্থায় হারাম তা তো বলাই বাহুল্য।
হাদীসে কুদসীতে আছে, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- اذا كان يوم صوم احدكم فلا يرفث ولا يصخب ‘তোমাদের কেউ যখন রোযা রাখে তখন সে যেন অশালীন কথাবার্তা না বলে ও হৈ চৈ না করে। -সহীহ বুখারী হাদীস : ১৯০৪;

ইসলামিক হাদীসের ই-বুকঃ বুখারী শরীফ

Book Name: বুখারী শরীফ
Book Format: PDF
Language: Bangla
Download Now
 Bangla Bukhari Sharif Part 1 Download
 Bangla Bukhari Sharif Part 2 Download
 Bangla Bukhari Sharif Part 3 Download
 Bangla Bukhari Sharif Part 4 Download
 Bangla Bukhari Sharif Part 5 Download
 Bangla Bukhari Sharif Part 6 Download
 Bangla Bukhari Sharif Part 7 Download
 Bangla Bukhari Sharif Part 8 Download
 Bangla Bukhari Sharif Part 9 Download
 Bangla Bukhari Sharif Part 10 Download

ইসলামিক হাদীসের ই-বুকঃ সহীহ মুসলিম শরীফ

Book Name: সহীহ মুসলিম শরীফ  
Book Format: PDF 
Language: Bangla
Download Now
Sahih Muslim Part 1 Download
Sahih Muslim Part 2 Download
Sahih Muslim Part 3 Download
Sahih Muslim Part 4 Download
Sahih Muslim Part 5 Download
Sahih Muslim Part 6 Download
Sahih Muslim Part 7 Download
Sahih Muslim Part 8 Download

ইসলামিক হাদীসের ই-বুকঃ মুয়াত্তা ইমাম মালিক (র)

Book Name: মুয়াত্তা ইমাম মালিক (র)
Book Format: PDF 
Language: Bangla
Download Now
Muwatta Imam Malik Part 1 Download
Muwatta Imam Malik Part 2 Download

ইসলামিক হাদীসের ই-বুকঃ মুসনাদে আহমদ

Book Name: মুসনাদে আহমদ
Book Format: PDF
Language: Bangla
 
Download Now
Musnad Ahmad Part 1  Download
Musnad Ahmad Part 2  Download